রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন
মিজান আহমদ, পাইলগাঁও (জগন্নাথপুর) ইউনিয়ন সংবাদদাতা: জগন্নাথপুরের পাইলগাঁও ইউনিয়নের ফসল হানির ঘটনা সামাল দেয়ার আগেই কৃষকরা নানামুখি সমস্যায় পড়েছেন। ঘরে নাই ভাত, মাথায় ঋণের বোঝা, বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, বাজারে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সব মিলিয়ে আঁধার দুর্ভিক্ষের অসনি সংকেত বিরাজ করছে জগন্নাথপুরের পাইলগাঁও ইউনিয়নের মানুষের মাঝে। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরপারের কৃষকদের কান্না থামছেনা। সাধারণ আয়ের মানুষ হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। কারো মুখের দিকে থাকানো যাচ্ছেনা। সবাই দুঃশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত। বেঁচে থাকার তাগিদে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষজন। এ যেন এক অন্য পাইলগাঁও। আগের সেই প্রবাসি অধ্যুষিত হাসিমাখা পাইলগাঁওয়ের হারিয়ে গেছে দুর্ভিক্ষের বেড়াজালে। খাবার সংগ্রহ নিয়ে চলছে রীতিমত প্রতিযোগিতা। যা কখনো দেখা যায়নি। এমন চিত্র নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। জানা গেছে, জগন্নাথপুরের পাইলগাঁও ইউনিয়নে এবার বাম্পান বোরো ফসল উৎপাদিত হয়েছিল। হাওরে হাওরে সবুজের সমারোহ দেখে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠে তৃপ্তির হাসি। হঠাৎ তাদের সকল আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। দেখা দেয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। শুরু হয় বৃষ্টি। আর থামতে চায়না। কখনো হালকা, কখনো মাঝারি আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হতে থাকে। বৃষ্টির পানিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়।
গত ৫ এপ্রিল অলইতলী গ্রামের দক্ষিণে ঈদগাহের পাশে একটি বেড়িবাধ ভেঙে অলইতলী, কাতিয়া ও জালালপুরের সব হাওর পানির নিচে তলিয়ে যায়। বিগত বছর পাকা-আধা পাকা ফসল তলিয়ে গেলেও এবার কাঁচা ফসলহানি হয়েছে। ফসলহানির ঘটনায় পাইলগাঁও ইউনিয়নের চিত্র বদলে যায়। হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। এ যেন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুশিয়ারা নদীরপাড়ের মানুষদের ঘরবাড়িতে পানির বন্যা বইতেছে। পানি বন্ধি হয়ে পড়েছেন হাওরপাড়ের লোকজন। অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। আবার অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠতে চলেছে। এছাড়া ও ১২৪নং বাংলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের বাড়ান্দায় পানি উঠেছে এবং জালালপুরের একটি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জালালপুর মাদরাসায় পানি ডুকে গেছে। এখনও বৃষ্টিপাত থামছে না। নদী ও হাওরে পানি বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় অন্যত্র নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পানি বন্ধি লোকজন। তবে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকে বলেন, হাওর তলিয়ে ফসল হানিতে ঘরে নাই ভাত, এলাকায় নিদান দেখা দিয়েছে, তার উপর ঋণের বোঝা। জমি চাষাবাদ কালীন সময়ে ধানুয়া-লগ্নির ঋণ এখন চাপ দিচ্ছে। এরমধ্যে বন্যার পানি বেড়ে বাড়িঘর তলিয়ে যাচ্ছে।
ঢেউয়ের কবল থেকে বাড়ি বাঁচাতে বাঁশের আড় তৈরি করার ক্ষমতা আমাদের নেই। গোলায় নেই গবাদি পশুর খাদ্য। বাজারে বেড়েছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম। কেনার ক্ষমতা নেই। পরিবারের লোকজনদের নিয়ে কোথায় যাবো তা ভেবে পাচ্ছিনা।
এদিকে আগাম দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে ক্ষত্রিগস্ত কৃষকসহ জনসাধারণ খাবার সংগ্রহ করতে প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। প্রতিদিন পাইলগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজারের চাল, আটা, ময়দা, তেল, ডালসহ নিত্যপণ্য কিনতে দোকানে ভীড় করছেন। এ সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়িয়ে দিয়েছেন নিত্যপণ্যের দাম। এতে জন ভোগান্তি বেড়েছে। প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের ভেলকিবাজি তো রয়েছে। সব মিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অসৎ চাল ব্যবসায়ীদের করা হচ্ছেনা কোন জরিমানা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল শ্রেণি-পেশার লোকজন আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।